বিএনপির প্রাপ্ত ভোট বিস্ময়কর ঠেকছে অনেকের কাছে টিবিটি নিউজ ডেস্ক টিবিটি নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮ | আপডেট: ১০:১২:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮ বিএনপির প্রাপ্ত ভোট বিস্ময়কর ঠেকছে অনেকের কাছে। ছবি: সংগৃহীতএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনের ফলাফলে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে ধানের শীষের যে ভোট দেখা যাচ্ছে, সেটি অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। অনেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যত ভোট পেয়েছেন, বিএনপির প্রার্থী তার মাত্র দশ ভাগের এক ভাগ ভোট পেয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া ফলাফলে দেখা গেছে।উভয় দলের ভোটের ফলাফলে এতোটা তারতম্য হবে সেটি অনেকে ভাবতেই পারেননি, যদিও এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অতীতের নির্বাচনে যেসব আসনে বিএনপি ক্রমাগত জয়লাভ করেছে কিংবা পরাজিত হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভোট পেয়েছে, সেসব আসনে এবার ভোটের বিশাল পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।প্রথমে আসা যাক ফেনী জেলার নির্বাচনী আসনগুলোতে।ফেনী ১ আসনটিতে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বড় ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। অথচ এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী পেয়েছেন ২৪,৯৭২ ভোট।দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় এবারের নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। অন্যদিকে এ আসনে নৌকা মার্কা নিয়ে লড়েছেন জাসদের শিরিন আক্তার। তবে সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া ১,১৪,৪৮২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৮,৫৫১ ভোট।এবারের নির্বাচনে এই আসনে ভোটের এ বিশাল পার্থক্য বেশ অবাক করেছে স্থানীয় অনেক বাসিন্দাকে। এ জেলার আরেকটি আসন ফেনী ৩ যেখানে আওয়ামী লীগ এর আগে কখনোই জয়লাভ করতে পারেনি। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ফেনী ৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৫,৭৮৪ ভোট। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদউদ্দিন চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২,৯০,৬৮৯ ভোট।অর্থাৎ বিএনপির প্রার্থীর সাথে তার ভোটের ব্যবধান প্রায় ২৮৫,০০০ ভোট।নিচে ছকের মাধ্যমে কয়েকটি আসনে বিএনপির প্রাপ্ত ভোটের তুলনামূলক চিত্র তুলে হলো। এতে দেখা যাচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী যে ভোট পেয়েছিলেন, ২০১৮ সালে সেটি এতোটাই কমে গেছে যে অনেকের কাছে অনেকটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।আসন২০০৮ সালে প্রাপ্ত ভোট ২০১৮ সালে প্রাপ্ত ভোটব্রাহ্মবাড়িয়া ৩৮৬,৫৮৭ ভোট৪,৬৭৭ ভোটনোয়াখালী ৪১,১৮,৯৫৬ ভোট২৩,২৫৭ ভোটসিরাজগঞ্জ ১৪০,৮১৪ ভোট১,১১৮ ভোটযশোর ১৮৮,৭০০ ভোট (জামায়াতে ইসলামী)৪,৯৮১ ভোটরাজশাহী ৪৮৩,৬৩৩ ভোট১৪,১৬০ ভোটজনসমর্থনের বিচারে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে উত্তরাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ জেলায়। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন ধারণা পাওয়া যায়।কিন্তু এবারের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের কয়েকটি আসনে ধানের শীষ যে ভোট পেয়েছে, সেটি রীতিমতো অবাক করার মতো বিষয় বলে মনে হয়েছে অনেকের কাছে। যেমন সিরাজগঞ্জ ২ আসন। এ আসনে এবার প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেছেন বিএনপির রুমানা মাহমুদ এবং আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাত।এবার হাবিবে মিল্লাত পেয়েছেন ২লাখ ৯৪ হাজার ৮০৫ ভোট। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদ পেয়েছেন মাত্র ১৩ হাজার ৭২৮ ভোট। অর্থাৎ বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ ২,৮১,০০০ ভোট বেশি পেয়েছে। অথচ এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির রুমানা মাহমুদ প্রায় ১২৮,০০০ ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।আরেকটি আসন হচ্ছে নরসিংদী ২ যেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান ১৯৯১ সাল থেকে পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপি পরাজিত হলেও আব্দুল মঈন খান ৭০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন।কিন্তু এবার খান পেয়েছেন মাত্র ৭হাজার ১০০ ভোট। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন প্রায় ১লাখ ৭৫ হাজার ভোট। মাত্রকয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছে। অথচ এবারের নির্বাচনে সিলেট ১ আসনে বিএনপির প্রার্থী প্রায় ১লাখ ৭৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।সিলেট ১ আসনটিতে অধিকাংশ ভোটার সিলেট মহানগর এলাকায় বসবাস করেন।মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একই জায়গায় বিএনপি প্রার্থী কিভাবে এতো বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেন সেটি অনেকের কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে।ভোটের ক্ষেত্রে নানা অসংগতি:জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগ হচ্ছে, অধিকাংশ আসনে ভোটের আগের রাতে নৌকায় সিল দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়েছিল। এছাড়া অনেক স্থানে দিনের বেলায় ভোট কেন্দ্রে আসতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগও রয়েছে।যেমন ফেনী ২ আসনের একটি কেন্দ্র হচ্ছে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এ আসনে মোট ভোটার ৩ হাজার ৪৪৮। কিন্তু এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৩,১৬৭ ভোট। অন্য কোন দলের পক্ষে কোন ভোট পড়েনি এখানে।এটিকে বেশ অবিশ্বাস্য বিষয় বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা, যারা নাম প্রকাশে একেবারেই অনিচ্ছুক। চট্টগ্রামের একটি আসনে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ব্যালটভর্তি বাক্স বিবিসির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।এছাড়া অনেক ভোট কেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন দেখা গেলেও ভেতরে ছিল ফাঁকা। কোথাও কোথাও বাইরে লম্বা লাইন রেখে ভেতরে ভোট কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। আরও পড়ুন আফগানিস্তান আমাদের মুসলিম ভাই : তামিম পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের উন্নতি