সমাজকে আলোকিত করতে গিয়েও অন্ধকার থেকে বের হতে পারছেন না রুবি বেগম টিবিটি নিউজ ডেস্ক টিবিটি নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৪:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯ | আপডেট: ৪:৪২:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯ রুবি বেগম। ফাইল ছবিমুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী: রুবি বেগম দোয়ারাবাজার উপজেলার একজন আলোকিত নারী। তিনি দীর্ঘ এক যুগ ধরে উপজেলার টেংরাটিলায় বাঁক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।নিঃসন্তান রুবি বেগম শিশু কালে মা বাবা হারিয়ে অনেকটাই অভিভাবকহীন পড়েন। সিলেটে এক বড় বোনের তত্তাবধানে থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০৮ সালে এএসসি পাশ করে সমাজের বাঁক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি শিশুদের নিয়ে কাজ দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন।স্থানীয় টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে গ্রেনেট কেলি নামক জনৈক ব্যক্তির উৎসাহ উদ্দীপনায় ২০০৫ সালে নিজের অদম্য চিন্তা চেতনায় বলিয়ান হয়ে বাংলা ইশারা ভাষার উপর ডেফ ফাউন্ডেশনের অধীনে ঢাকা সিডিডি সাভারে ২বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন।আত্নপ্রত্যয়ী ওই নারী দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ শেষ করে স্থানীয় টেংরাটিলা গ্রামে নিজের টাকায় ৭শতক ভূমি ক্রয় করে বসত ঘরেই প্রতিবন্ধি শিশুদের বাংলা ইশারা ভাষার লেখাপড়ার কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁর মানবিক এমন উদ্যোগে ডেফ ফাউন্ডেশন নামক একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁর পাশে দাঁড়ায়।এরই সুবাদে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে নাইকো কোম্পানীর চাকুরীরত জনৈক গ্রেনেট কেলি নামক ব্যক্তির চেষ্টায় ডেফ শিশুদের পাঠশালা প্রতিষ্ঠায় ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে তার বসতবাড়ীর সংলগ্ন ৮শতক ভূমি দান করে।শুরুতে নিজ বসত গৃহে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। তৎসময়ে বেশ সাড়া পান তিনি। তৎসময়ে বাঁক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধিসহ ৭২জন প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনা করে তাঁর পাঠশালায়।নানা বাধা বিপত্তির মধ্যেও তিনি বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিবন্ধি শিশুদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করতে থাকেন রুবি বেগম। পরবর্তীতে গ্রেনেট কেলি ব্যক্তিগতভাবে তাকে পারিশ্রমিক হিসেবে অল্প টাকা দিতেন। ২০০৫ সালে টেংরাটিলা গ্যাস কুপে একাধিকবার বিস্ফোরণ ঘটলে কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো চলে যাওয়ায় গ্রেনেট কেলিকেও চলে যেতে হয়। সব ধরণের সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গেলেও থেমে যায়নি রুবি বেগমের কার্যক্রম। সরকারি সহায়তা ব্যতিত বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নে কাজ করতে থাকেন তিনি।উদ্যেক্তা গ্রেনেট কেলি চাকুরীচ্যুত হয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করায় স্কুল ঘর নির্মিত হয়নি। শুধুমাত্র তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই তখন ৭২ জন শিক্ষার্থী অক্ষরজ্ঞান অর্জনসহ বাংলা ইশারা ভাষা লব্দ করে।অন্যদিকে মানবিক কাজে নিয়োজিত আর পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে রুবি বেগম মাধ্যমিক গন্ডি পেরুতে পারলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন এখানেই ভেস্তে যায়। ২০১০ সালে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করার সুবাধে নুরুল ইসলাম দীপু নামের যুবকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। পরবর্তীতে তার সঙ্গে বিয়ে হয় রুবি বেগমের। বিয়ের পর সংসারজীবনে সুখী হলেও আজোবধি সন্তানের মুখ দেখেননি তিনি।বর্তমানে স্কুল ঘর না থাকায় নিজ বসত ঘরে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ৩২ জন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীকে বাংলা ইশারা ভাষা লব্ধ করানোর পাশাপাশি দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে প্রতি ৬ মাসে ৪হাজার দুই শত টাকা করে সরকারি ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।রুবি বেগম বলেন, ২০০৫ সাল হতে এ পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের নিরক্ষতা দূরীকরণসহ, বাংলায় ইশারা ভাষায় স্বাবলম্বী করানো, তাদের প্রত্যেককে সরকারি ভাতার অন্তর্ভুক্ত করিয়ে দিয়েছি। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বর্তমানে বিনা বেতন ভাতায় নিজে এ কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি বেসরকারি কোনো সহায়তা পাচ্ছিনা। এছাড়া স্কুলের জায়গা থাকলেও ঘরের অভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর্যাপ্ত জায়গার সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কাজ করে যাবো। প্রতিবন্ধীরাই আমার সন্তান। আরও পড়ুন মুজিববর্ষে প্রধান মন্ত্রীর বিনামূল্যে বাড়ি উপহার পৃথিবীতে এক অনন্য নজির রাজশাহী কেন গ্রীন সিটি?